গত সেপ্টেম্বরে এক ঘোষণায় শি চিনপিং বলেন, ২০৬০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে চায় চীন। এর আগে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমন করবে দেশটি। অন্যদিকে ২০৫০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্য পূরণ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান ২৬তম জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে ঐক্যের ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে বড় চমক উপহার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আগামী এক দশক যৌথভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ দুটি।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বিদ্যমান বৈশ্বিক প্রচেষ্টার গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে চির বৈরী দুই দেশ |
_____________
বুধবার এক বিরল ঘোষণায় এ কথা জানান যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিনিধিরা।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির শর্ত বাস্তবায়নে উভয় পক্ষই একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে তারা।
লক্ষ্য পূরণে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য ব্যবধান’, যা কাটিয়ে ওঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বিশ্বসম্প্রদায়। কারণ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতম প্রভাব ঠেকানো ও মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। শিল্পবিপ্লব-পূর্ববর্তী যুগের তাপমাত্রার সঙ্গে তুলনামূলক হিসাবের ভিত্তিতে এমন ধারণা গবেষকদের।
২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২১তম জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। যৌথ অঙ্গীকারে তারা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিমাণ দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ চীনা আলোচক শিয়ে ঝেনহুয়া সাংবাদিকদের জানান, অন্য সব ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র যতটাই বিপরীতমুখী, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে দেশ দুটি ততটাই ঐক্যবদ্ধ’।
আগামী সপ্তাহে ভার্চুয়াল বৈঠক করতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। ২০ দিনের এ সম্মেলনে সশরীরে অংশ না নেয়ায় গত সপ্তাহে চিনপিংয়ের সমালোচনা করেছিলেন বাইডেন।
নিরাপত্তা, বাণিজ্যসহ নানা ইস্যুতে দেশ দুটিকে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়।
এমন বাস্তবতায় জলবায়ু ইস্যুতে বিরল যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, মিথেন নিঃসরণ, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার শুরু ও কার্বনবিহীন ব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাসের অন্যতম উপাদান হিসেবে মিথেন নিঃসরণ কমাতে চলতি সপ্তাহে একটি যৌথ চুক্তিতে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায় চীন। প্রায় এক শ দেশ চুক্তিটিতে সই করলেও মিথেন নিঃসরণ কমাতে চীন এককভাবে ‘জাতীয় পরিকল্পনা’ প্রণয়নের আশ্বাস দিয়েছে।
চীনের শিয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন জলবায়ুবিষয়ক দূত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
তিনি বলেন, ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণের সীমা-পরিসীমা নেই, কিন্তু জলবায়ু ইস্যুতে আসলে ঐক্যের বিকল্প নেই।
‘এই মুহূর্তে প্রতিটি পদক্ষেপ খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের সামনে দীর্ঘ যাত্রা পড়ে আছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যৌথ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক জেনিফার মরগ্যান, তবে জলবায়ু ইস্যুতে লক্ষ্য অর্জনে দেশ দুটিকে আরও অনেক অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এ ঘোষণাকে ‘সঠিক পথে অগ্রসর হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
২০১৫ সালের পর চলমান জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হতে যাচ্ছে। প্রায় দুই শ দেশের কাছে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে এ সম্মেলনে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে মনে করা হয় গ্রিনহাউস গ্যাসকে। ক্ষতিকর গ্রিনহাউসের উপাদানগুলো হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি।
গত সেপ্টেম্বরে এক ঘোষণায় শি চিনপিং বলেন, ২০৬০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে চায় চীন। এর আগে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমন করবে দেশটি।
অন্যদিকে ২০৫০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্য পূরণ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
0 Comments