ফাইল ছবি |
করোনার ধাক্কায় গত বছর তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ কনটেইনার পরিবহনের তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর। সেই ধাক্কা সামলে এবার বছর শেষ হওয়ার আগে কনটেইনার পরিবহনে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বন্দরটি। মূলত আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর ভর করেই বাড়ছে কনটেইনার পরিবহন।
এর আগে সর্বোচ্চ কনটেইনার পরিবহন হয়েছিল ২০১৯ সালে। সেবার বন্দর দিয়ে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার কনটেইনার পরিবহন হয়।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বছর কনটেইনার পরিবহন ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তাই বছর শেষে তা আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা বন্দর কর্মকর্তাদের। এর আগে সর্বোচ্চ কনটেইনার পরিবহন হয়েছিল ২০১৯ সালে। সেবার বন্দর দিয়ে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার কনটেইনার পরিবহন হয়। করোনার সময় গত বছর প্রায় ৮ শতাংশ কমে কনটেইনার পরিবহন নেমে আসে ২৮ লাখ ৩৯ হাজারে।
আমদানি–রপ্তানি পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনার ওঠানো–নামানোর সংখ্যা ধরে বিশ্বজুড়ে কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করা হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, এবার বছর শেষে কনটেইনার পরিবহন ৩২ লাখে উন্নীত হতে পারে। বন্দরের কর্মকর্তা–কর্মচারী ও ব্যবহারকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবার নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বন্দর।
আমদানি–রপ্তানি পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনার ওঠানো–নামানোর সংখ্যা ধরে বিশ্বজুড়ে কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটি, পানগাঁও নৌ টার্মিনাল ও কমলাপুর কনটেইনার ডিপোতে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর সংখ্যা যোগ করে মোট কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা প্রকাশ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শেষে থমকে যাওয়া কারখানার চাকা আবার সচল হয়েছে। উৎপাদন সচল রাখতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও বাড়ছে। বিশেষ করে পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানি যেমন বেড়েছে, তেমনি তৈরি পণ্যের রপ্তানিও বাড়ছে। দিন শেষে তা কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা বাড়ানোর গতি এনেছে।
কনটেইনার পরিবহন বাড়লেও বিশ্বের উন্নত বন্দরগুলোর মতো করোনার সময় দীর্ঘ জটে পড়তে হয়নি এই বন্দরকে। কয়েক মাস ধরে জাহাজ আসার পর দিনে দিনে বা এক–দুই দিনে জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ মিলছে। অর্থাৎ পণ্য হাতে পেতে আগের মতো দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এ জন্য বন্দরকে জেটি ব্যবস্থাপনায় নতুন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
করোনার ধাক্কা সামলে কনটেইনার পরিবহন বাড়ার কারণ হলো আমদানি–রপ্তানি বৃদ্ধি। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শেষে থমকে যাওয়া কারখানার চাকা আবার সচল হয়েছে। উৎপাদন সচল রাখতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও বাড়ছে। বিশেষ করে পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানি যেমন বেড়েছে, তেমনি তৈরি পণ্যের রপ্তানিও বাড়ছে। দিন শেষে তা কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা বাড়ানোর গতি এনেছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরে কনটেইনার পরিবহনের প্রবৃদ্ধি পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধির বড় প্রতিফলন। এটাও ঠিক, আগের তুলনায় কনটেইনার পণ্য আমদানি–রপ্তানিতে বন্দরের সেবা বেড়েছে। দিনের পর দিন পণ্য হাতে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে নতুন প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে নজর দিতে হবে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যত পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়, তার মাত্র ২৫ শতাংশ কনটেইনারে এবং বাকি পণ্য জাহাজের খোলে (বাল্ক আকারে) করে আনা-নেওয়া হয়। কনটেইনারে তুলনামূলক কম পণ্য পরিবহন হলেও পণ্য বিবেচনায় এর গুরুত্ব বেশি। কারণ, দু-তিনটি ছাড়া সব শিল্পকারখানার কাঁচামাল কনটেইনারে আমদানি হয়। এ তালিকায় আছে পোশাক, ওষুধ, জুতা, ইস্পাত, বাণিজ্যিক পণ্য, ভোগ্যপণ্য ইত্যাদি। আবার রপ্তানি পণ্যের প্রায় পুরোটাই পাঠানো হয় কনটেইনারে। এসব কারণে কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের প্রবৃদ্ধি কমবেশি হওয়াটা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি নির্দেশ করে।
আবার দেশে সমুদ্রপথে পরিবাহিত কনটেইনারের ৯৮ শতাংশই আনা–নেওয়া হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বও বেশি।
0 Comments